হাতের মুঠোয় যাদের জীবন
দৈনিক যায়যায়দিন, ১১ এপ্রিল ২০০৯
এহতেশামুল হক শাওন, খুলনা
---------------------------------
পদের নাম বনপ্রহরী। বেতন ২ হাজার ৮৫০ টাকা। পদের নাম নৌকাচালক, বেতন ২ হাজার ৪০০ টাকা। অপার সৌন্দর্য ও অমূল্য প্রাকৃতিক সম্পদের আধার সুন্দরবন পাহারা দিয়ে রক্ষার দায়িত্ব যাদের সেই বন প্রহরী ও নৌকা মাঝিদের প্রাপ্ত বেতন এটি।
এর বাইরে অতিরিক্ত কোনো সুযোগ-সুবিধা নেই। অন্যান্য সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যেসব ভাতা সুবিধা পেয়ে থাকেন তার প্রায় কিছুই জোটে না তাদের ভাগ্যে। জনপদ থেকে অনেক দূরে, দুর্গম বনারণ্যে, পরিবার-পরিজন ছেড়ে বছরের পর বছর এভাবেই দায়িত্ব পালন করতে হয় তাদের। ডাঙায় বাঘ আর বনদস্যু, জলে কুমির আর মাথার ওপর প্রাকৃতিক জীবন দুর্যোগকে প্রতিনিয়ত সঙ্গী করে জাতীয় সম্পদ পাহারা দেন তারা।
সূত্র জানিয়েছে, সুন্দরবনের পূর্ব ও পশ্চিম রেঞ্জে ২০০ বনপ্রহরী এবং ৫৫০ নৌকাচালক রয়েছেন। বনের কাঠ পাচার রোধ করা থেকে শুরু করে বনদস্যু দমন, চোরা শিকারি ও পাচারকারীদের গ্রেপ্তার, মামলা দায়ের, সাক্ষ্য দেয়া, পাস পারমিট দিয়ে রাজস্ব আদায় করা, ট্রলার ও নৌকার ভাড়া দেয়া - সব কাজ করেন বনপ্রহরী ও নৌকার মাঝিরা। এসব কাজের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে যে পরিমাণ টাকা দেয়া হয় তা দিয়ে মাসের পাঁচ-ছয়দিনও কাজ চালানো যায় না। বাকি দিনগুলো চালাতে হয় তাদের নিজস্ব উৎস থেকে অর্থের জোগান দিয়ে। এখানেই শেষ নয়, বনদস্যু ও পাচারকারীদের গ্রেপ্তারের পর মামলা দায়ের, আদালতে আসা-যাওয়া, সাক্ষী হাজির করা, আসামিদের আনা-নেয়ার সব খরচ বহন করতে হয় বনপ্রহরী বা নৌকাচালকদের।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, সুন্দরবনের অনেক টহল ফাঁড়ি ও ক্যাম্প রয়েছে, যেখান থেকে ট্রলারযোগে লোকালয়ে পৌঁছতে কমপক্ষে ২৪ ঘণ্টা সময় লাগে। আর ট্রলার না থাকলে নৌকায় পৌঁছতে হলে ৪৮ থেকে ৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত লেগে যায়। লবণাক্ত পানির কারণে ডায়রিয়া হলে কিংবা অন্য কোনো রোগ-ব্যাধিতে আক্রান্ত হলে ডাক্তারের কাছে পৌঁছতে না পৌঁছতে অনেকের অবস্থা মরণাপন্ন হয়ে পড়ে। এ অবস্থায় বিভিন্ন দপ্তরে দুর্গম ভাতার ব্যবস্থা থাকলেও সুন্দরবন বিভাগের জন্য তা নেই। সুপার সাইক্লোন সিডরের আঘাতে বনের ভেতরের অধিকাংশ স্থাপনা ছিন্নভিন্ন হয়ে গেলেও সেগুলো যথাযথ মেরামতের উদ্যোগ নেয়া হয়নি।
একাধিক বনরক্ষী জানান, তারা এমন ঘরে বসবাস করেন যেখান থেকে একজন মানুষকে তুলে নিয়ে যেতে বাঘের কষ্ট করে দরজা ভাঙার প্রয়োজন পড়বে না। বাঘ দয়া করে তাদের কিছু বলে না বলে তারা বেঁচে আছেন। জানা গেছে, মান্দারবাড়ী, হিরন পয়েন্ট, হলদিবুনিয়া, আদাচাই, হংসরাজ, গেওয়াখালি, আন্ধারমানিক, কাঠেশ্বর প্রভৃতি টহল ফাঁড়ির অবস্থা অত্যন্ত শোচনীয়। জীবনটাকে মৃত্যুর হাতে সঁপে দিয়ে এখানে রাত কাটাতে হয়। এর চেয়ে দুর্ভাগ্যজনক হলো, ঝুঁকিপূর্ণ এ পেশায় দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে কারো মৃত্যু হলে তার পরিবার বন বিভাগ থেকে কোনো প্রকার আর্থিক সহায়তা পায় না। দুই সপ্তাহ আগে সিরাজ নামে এক বনরক্ষীকে দস্যুরা গলা কেটে হত্যা করে অস্ত্র লুট করে নিয়ে গেলে নিহতের পরিবার কোনো প্রকার সহায়তা পায়নি। তারা বলেন, অন ডিউটিতে থাকা অবস্থায় সরকারি কর্মচারী নিহত হলে কোনো ক্ষতিপূরণ না পাওয়ার নজির অন্য কোথাও নেই। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি সূত্র জানিয়েছে, বন বিভাগের বিরুদ্ধে কাঠ চুরি বা পাচারের অনেক অপবাদ দেয়া হলেও কেন এসব অনিয়ম হচ্ছে তার সন্ধান করে প্রতিকারের কোনো উদ্যোগ কেউ কখনো নেয়নি।
সূত্র জানিয়েছে, ২০০৭-০৮ অর্থবছরে সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগ (খুলনা ও সাতক্ষীরা রেঞ্জ নিয়ে গঠিত) থেকে ৩ কোটি ২৯ লাখ ১২ হাজার ১৮০ টাকা ৭০ পয়সা রাজস্ব আদায় হয়েছে। সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগ (বাগেরহাট রেঞ্জ নিয়ে গঠিত) থেকে সাধারণত রাজস্ব আদায় হয় এর চেয়ে অনেক বেশি। সূত্র বলছে, এর সিকি ভাগ অর্থ ব্যয় করা হলেও অনেক সমস্যার সমাধান করা সম্ভব।
এ বিষয়ে সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা অবণী ভূষণ ঠাকুর যায়যায়দিনকে বলেন, বন বিভাগের কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত বাজেটের অভাব রয়েছে। তারা সরকার থেকে বরাদ্দ পাচ্ছেন কিন্তু তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই অপ্রতুল। এ টাকা দিয়ে নিত্যদিনের কাজ করা কষ্টকর হয়ে পড়ে। সমস্যাগুলোর ব্যাপারে তারা সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে নিয়মিত অবহিত করছেন। তিনি জানান, নিহত সিরাজের পরিবারের জন্য তারা সবাই একদিনের বেতন দেবেন বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এছাড়া সে অন্যান্য সুবিধা পাবে।
এর বাইরে অতিরিক্ত কোনো সুযোগ-সুবিধা নেই। অন্যান্য সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যেসব ভাতা সুবিধা পেয়ে থাকেন তার প্রায় কিছুই জোটে না তাদের ভাগ্যে। জনপদ থেকে অনেক দূরে, দুর্গম বনারণ্যে, পরিবার-পরিজন ছেড়ে বছরের পর বছর এভাবেই দায়িত্ব পালন করতে হয় তাদের। ডাঙায় বাঘ আর বনদস্যু, জলে কুমির আর মাথার ওপর প্রাকৃতিক জীবন দুর্যোগকে প্রতিনিয়ত সঙ্গী করে জাতীয় সম্পদ পাহারা দেন তারা।
সূত্র জানিয়েছে, সুন্দরবনের পূর্ব ও পশ্চিম রেঞ্জে ২০০ বনপ্রহরী এবং ৫৫০ নৌকাচালক রয়েছেন। বনের কাঠ পাচার রোধ করা থেকে শুরু করে বনদস্যু দমন, চোরা শিকারি ও পাচারকারীদের গ্রেপ্তার, মামলা দায়ের, সাক্ষ্য দেয়া, পাস পারমিট দিয়ে রাজস্ব আদায় করা, ট্রলার ও নৌকার ভাড়া দেয়া - সব কাজ করেন বনপ্রহরী ও নৌকার মাঝিরা। এসব কাজের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে যে পরিমাণ টাকা দেয়া হয় তা দিয়ে মাসের পাঁচ-ছয়দিনও কাজ চালানো যায় না। বাকি দিনগুলো চালাতে হয় তাদের নিজস্ব উৎস থেকে অর্থের জোগান দিয়ে। এখানেই শেষ নয়, বনদস্যু ও পাচারকারীদের গ্রেপ্তারের পর মামলা দায়ের, আদালতে আসা-যাওয়া, সাক্ষী হাজির করা, আসামিদের আনা-নেয়ার সব খরচ বহন করতে হয় বনপ্রহরী বা নৌকাচালকদের।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, সুন্দরবনের অনেক টহল ফাঁড়ি ও ক্যাম্প রয়েছে, যেখান থেকে ট্রলারযোগে লোকালয়ে পৌঁছতে কমপক্ষে ২৪ ঘণ্টা সময় লাগে। আর ট্রলার না থাকলে নৌকায় পৌঁছতে হলে ৪৮ থেকে ৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত লেগে যায়। লবণাক্ত পানির কারণে ডায়রিয়া হলে কিংবা অন্য কোনো রোগ-ব্যাধিতে আক্রান্ত হলে ডাক্তারের কাছে পৌঁছতে না পৌঁছতে অনেকের অবস্থা মরণাপন্ন হয়ে পড়ে। এ অবস্থায় বিভিন্ন দপ্তরে দুর্গম ভাতার ব্যবস্থা থাকলেও সুন্দরবন বিভাগের জন্য তা নেই। সুপার সাইক্লোন সিডরের আঘাতে বনের ভেতরের অধিকাংশ স্থাপনা ছিন্নভিন্ন হয়ে গেলেও সেগুলো যথাযথ মেরামতের উদ্যোগ নেয়া হয়নি।
একাধিক বনরক্ষী জানান, তারা এমন ঘরে বসবাস করেন যেখান থেকে একজন মানুষকে তুলে নিয়ে যেতে বাঘের কষ্ট করে দরজা ভাঙার প্রয়োজন পড়বে না। বাঘ দয়া করে তাদের কিছু বলে না বলে তারা বেঁচে আছেন। জানা গেছে, মান্দারবাড়ী, হিরন পয়েন্ট, হলদিবুনিয়া, আদাচাই, হংসরাজ, গেওয়াখালি, আন্ধারমানিক, কাঠেশ্বর প্রভৃতি টহল ফাঁড়ির অবস্থা অত্যন্ত শোচনীয়। জীবনটাকে মৃত্যুর হাতে সঁপে দিয়ে এখানে রাত কাটাতে হয়। এর চেয়ে দুর্ভাগ্যজনক হলো, ঝুঁকিপূর্ণ এ পেশায় দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে কারো মৃত্যু হলে তার পরিবার বন বিভাগ থেকে কোনো প্রকার আর্থিক সহায়তা পায় না। দুই সপ্তাহ আগে সিরাজ নামে এক বনরক্ষীকে দস্যুরা গলা কেটে হত্যা করে অস্ত্র লুট করে নিয়ে গেলে নিহতের পরিবার কোনো প্রকার সহায়তা পায়নি। তারা বলেন, অন ডিউটিতে থাকা অবস্থায় সরকারি কর্মচারী নিহত হলে কোনো ক্ষতিপূরণ না পাওয়ার নজির অন্য কোথাও নেই। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি সূত্র জানিয়েছে, বন বিভাগের বিরুদ্ধে কাঠ চুরি বা পাচারের অনেক অপবাদ দেয়া হলেও কেন এসব অনিয়ম হচ্ছে তার সন্ধান করে প্রতিকারের কোনো উদ্যোগ কেউ কখনো নেয়নি।
সূত্র জানিয়েছে, ২০০৭-০৮ অর্থবছরে সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগ (খুলনা ও সাতক্ষীরা রেঞ্জ নিয়ে গঠিত) থেকে ৩ কোটি ২৯ লাখ ১২ হাজার ১৮০ টাকা ৭০ পয়সা রাজস্ব আদায় হয়েছে। সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগ (বাগেরহাট রেঞ্জ নিয়ে গঠিত) থেকে সাধারণত রাজস্ব আদায় হয় এর চেয়ে অনেক বেশি। সূত্র বলছে, এর সিকি ভাগ অর্থ ব্যয় করা হলেও অনেক সমস্যার সমাধান করা সম্ভব।
এ বিষয়ে সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা অবণী ভূষণ ঠাকুর যায়যায়দিনকে বলেন, বন বিভাগের কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত বাজেটের অভাব রয়েছে। তারা সরকার থেকে বরাদ্দ পাচ্ছেন কিন্তু তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই অপ্রতুল। এ টাকা দিয়ে নিত্যদিনের কাজ করা কষ্টকর হয়ে পড়ে। সমস্যাগুলোর ব্যাপারে তারা সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে নিয়মিত অবহিত করছেন। তিনি জানান, নিহত সিরাজের পরিবারের জন্য তারা সবাই একদিনের বেতন দেবেন বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এছাড়া সে অন্যান্য সুবিধা পাবে।