প্রাকৃতিক সম্পদের মালিক জনগণ, সুন্দরবনের জন্য ক্ষতিকর উদ্যোগ ঠেকাতে জনগণকেই এগিয়ে আসতে হবে

সুন্দরবন সমাচার
১৫ মার্চ ২০১৬
---------------
Meet the Press of Indian representatives in Sundarbans Long March
কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের দূষণ মাত্রা অনেক ও বহুমুখী। এর ফলে সুন্দরবনের প্রতিবেশ হুমকির মুখে পড়তে পারে। কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের কারণে ভারতের কিছু এলাকার জনসাধারণ ইতোমধ্যে তাদের জীবিকা হারিয়েছে, পরিবেশ নষ্ট হয়েছে। এ কারণেই জনগণের পক্ষ থেকে সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করা উচিৎ এবং যৌথ আন্দোলন গড়ে তোলা উচিৎ।

তবে দেশে শিল্পায়নের কোন বিকল্প নেই। দেশের অগ্রগতি ও গণমানুষের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য অবশ্যই বিভিন্ন শিল্প-কারখানা গড়ে তুলতে হবে। আর শিল্প এবং কৃষির আধুনিকায়নের জন্য প্রয়োজন জ্বালানী অর্থাৎ বিদ্যুৎ। সে ক্ষেত্রে বিদ্যুৎ কেন্দ্র অবশ্যই গড়ে তুলতে হবে, তবে লক্ষ্য রাখতে হবে দুষণের মাত্রা যেন পরিবেশের সর্বনাশ করতে সক্ষম না হয়, যা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।

মনে রাখতে হবে বিদেশী এজেন্ট উন্নয়ন বিরোধীরাও তৎপর, যারা উন্নয়নের বিপরিতে পরিবেশ-প্রতিবেশ’র দরদী হতে চায় আবার (ব্যক্তিসার্থে) লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে বিদেশী রাষ্ট্রকে সিসমিক সার্ভের অনুমতি দিতে প্রত্যক্ষ সমর্থন দিয়ে পরিবেশের সর্বনাশ ডেকে আনে। এরা স্বাধীনতার পর পর সমাজতন্ত্রের নামে দেশে সকল প্রকার বিনিয়োগ বন্ধের সিদ্ধান্ত দিয়েছিলো। ফলে সদ্যজাত বাংলাদেশ হয়ে পড়ে শিল্পোন্নত দেশের বাজার মাত্র। দেশ পিছিয়ে পড়ে বহুযুগ। আবার দেশের আকাশে দেখা দিয়েছে পুরোনো শকুণ!

আজ খুলনা প্রেস ক্লাবের শহীদ হুমায়ুন কবির বালু মিলনায়তনে সুন্দরবন পর্যবেক্ষণ দল, উপকূলীয় জীবনযাত্রা ও পরিবেশ কর্মজোট, সর্বভারতীয় বনকর্মী ইউনিয়ন, সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড পার্টিসিপেটরি রিসার্চ (সিইপিআর), ভারত বিজ্ঞান যাত্রা, দিল্লি সলিডারিটি গ্রুপ, মাচ্ছিমার অধিকার সংগঠন (ম্যাস) ও জাতীয় মৎস্যজীবী ফোরাম কর্তৃক যৌথভাবে আয়োজিত সাংবাদিকদের সঙ্গে “কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র ও উপকূলীয় প্রতিবেশ” শীর্ষক আলোচনা সভায় ভারতীয় প্রতিনিধি দলের সদস্যরা এ কথা বলেন।

আলোচনা সভায় অংশগ্রহণ করেন প্রতিনিধি দলের সদস্য ও সর্বভারতীয় বনকর্মী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক অশোক চৌধুরী, উপ-সম্পাদক রোমা মালিক, ভারত জন-বিজ্ঞান যাত্রার আহ্বায়ক সৌম্য দত্ত, কেরালার জাতীয় মৎস্যজীবী ফোরামের ম্যাগলিন পিটার, গুজরাটের মাচ্ছিমার অধিকার সংঘর্ষ সংগঠন (ম্যাস)’র ভারত প্যাটেল, উত্তর প্রদেশের উমেশ বাবু, উড়িষ্যার শীলা মহাপাত্র, কেরালার মাজু ভারগেসে, মধ্য প্রদেশের রাজেশ কুমার ও মহারাষ্ট্রের আয়েশা ডি’সুজা। আলোচনা সভার সঞ্চালক ছিলেন উপকূলীয় জীবনযাত্রা ও পরিবেশ কর্মজোট (ক্লিন)’র প্রধান নির্বাহী হাসান মেহেদী।

আলোচনায় অংশ নিয়ে ম্যাস’র ভারত প্যাটেল বলেন, গুজরাটের কচ্ছ উপসাগরের তীরে প্রথমে মাত্র ৩০০ মেগাওয়াটের একটি কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হয়। এ বিদ্যুৎকেন্দ্রের উত্তপ্ত পানির কারণে উপকূল মৎস্যশূন্য হয়ে ১০ হাজারেরও বেশি মানুষ তাদের জীবিকা হারিয়েছে। অপরদিকে কর্মসংস্থান হয়েছে মাত্র ২শ’ মানুষের। এ বিদ্যুৎকেন্দ্রের কয়লা সরবরাহের জন্য তৈরি করা হয়েছে বিশেষ বন্দর। বন্দরের জাহাজের শব্দ ও দুষণে নষ্ট হয়ে গেছে এলাকার পরিবেশ। বিদ্যুৎকেন্দ্রের উপর নির্ভর করে গড়ে ওঠা শিল্প-কারখানার জন্য নির্মাণ করা হয়েছে আরো বিদ্যুৎকেন্দ্র। মাত্র ৩০০ একর জায়গা নিয়ে শুরু করলেও এখন ১২০ কিলোমিটার ব্যাপী দুষণকারী কারখানা আর বিদ্যুৎকেন্দ্রে ছেয়ে গেছে পুরো এলাকা। কেরালার মৎস্যজীবী ফোরামের ম্যাগলিন পিটার বলেন, আদানী ও আম্বানি গ্রুপের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের কারণে হাজার হাজার জেলে তাদের জীবিকা হারিয়েছে।

সর্বভারতীয় বনকর্মী ইউনিয়নের অশোক চৌধুরী বলেন, রাষ্ট্রীয় সংস্থা হিশেবে ভারতের জাতীয় তাপবিদ্যুৎ কোম্পানি (এনটিপিসি)’র দায়িত্ব হলো নিজ দেশের জনসাধারণকে বিদ্যুৎ পরিষেবা প্রদান করা। অন্য দেশে মুনাফার জন্য কোম্পানি তৈরি করার কোনো অধিকার এ সংস্থার নেই। ভারত জন-বিজ্ঞান যাত্রার সৌম্য দত্ত বলেন, ভারত-বাংলাদেশের একটাই সুন্দরবন। এর কোনো একটি অংশে নেতিবাচক প্রভাব পড়লে অপর অংশও ক্ষতিগ্রস্থ হয়। ভারতীয় কোম্পানি যদি সেই ক্ষতির জন্য দায়ী হয় তাহলে উদ্যোগ নিতে হবে যৌথভাবে। সেখানে ভারতীয় জনগণ নিজ কোম্পানিকে প্রতিরোধ করার জন্য কাজ করবেন, বাংলাদেশ কাজ করবে নিজ প্রতিবেশ রক্ষার জন্য। রোমা মালিক বলেন, সমৃদ্ধ দক্ষিণ এশিয়ার প্রাকৃতিক সম্পদ নষ্ট করে মুষ্টিমেয় ধনী কোম্পানিগুলো মুনাফার পাহাড় গড়ছে। এর বিরুদ্ধে দক্ষিণ এশীয় জনসাধারণের সম্মিলিতভাবে প্রতিবাদ জানাতে হবে। তাই জনগণের সঙ্গে জনগণের সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে।

আলোচনা সভায় আরো আলোচনা করেন, হিউম্যানিটিওয়াচ’র শরিফুল ইসলাম সেলিম, শিশুস্বর্গ খেলাঘর আসরের মাইনুল ইসলাম সাকিব, ক্লিন’র রেজাউল করিম জিতু, সুবর্ণা ইসলাম দিশা, বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার সাংবাকিবৃন্দ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সাংবাদিক গৌরাঙ্গ নন্দী।

Popular Articles

নির্বাচনী ইশতেহারে দক্ষিণাঞ্চলের কৃষি রক্ষার বিষয়টি অন্তর্ভূক্ত করতে হবে

Video Message from Bangladesh to COP-22

Housing for Cyclone Aila affected Forest Peoples of Dacope and Koyra Upazila under Khulna Districts